পাকা ধান কাটা ও ধান বাসাতের সাহায্যে পরিস্কার করা।
ধান (বৈজ্ঞানিক নাম : Oryza sativa) Graminae গোত্রের দানাশস্যের উদ্ভিদ । ধান উষ্ণ জলবায়ুতে, বিশেষত পূর্ব-এশিয়ায় ব্যাপক চাষ হয়। প্রাচীন চীনা ভাষার Ou-liz শব্দটি আরবিতে Oruz ও গ্রিক ভাষায় Oryza হয়ে শেষে Ritz ও Rice হয়েছে। ধান বা ধান্য শব্দের উৎপত্তি অজ্ঞাত। ধানবীজ বা চাল সুপ্রাচীনকাল থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রধান খাদ্য। চীন ও জাপানের রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রায় ১০,০০০ বছর আগে ধানচাষ শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়। ব্যাপক অভিযোজন ক্ষমতার দরুন ধান উত্তর কোরিয়া থেকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, এমনকি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২,৬০০ মিটার উচ্চতায়ও (জুমলা, নেপাল) জন্মায়। বাংলাদেশে আউশ, আমন এবং বোরো এই তিন মৌসুমে ধান চাষ করা হয়।
আমাদের অনেকের-ই ধারণা ধান প্রধানতঃ জলজ উদ্ভিদ এবং স্থির দাঁড়িয়ে থাকা জলে-ই এর চাষ ভালো হয়। ধান জলজ উদ্ভিদ নয়; জলে ধানগাছ বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেলে (hypoxic level) তার বৃদ্ধি ঠিকমতো হয় না।
একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা জলে প্রচুর শক্তি ক্ষয় করে ধান তার মূলে বায়ুথলি (aerenchyma tissue) তৈরী করে। ফুল ফোটার আগে-ই প্রায় ৭০% মূলের অগ্রভাগ ঝরে যায়।
ধানের বৃদ্ধির সময়ে SRI পদ্ধতিতে জমিতে জল না জমিয়ে যথাসম্ভব আর্দ্র রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে জমিতে শুধুমাত্র এক ইঞ্চি জল ধরে রাখা হয়।প্রচলিত সেচব্যবস্থায় ধান চাষে ব্যবহৃত জলের তুলনায় SRI পদ্ধতিতে মাত্র অর্ধেক জল খরচ হয়। সমগ্র বিশ্বে ১,০০,০০০-এরও বেশী পরিবার SRI ব্যবস্থা নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে।
SRI ব্যবস্থায় কম পরিমাণে জল লাগে, কম খরচে উত্পাদন বেশী হয়। ফলে ছোট ও প্রান্তিক চাষীর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অত্যন্ত উপযোগী। ১৯৮০ সালে SRI ব্যবস্থার প্রথম প্রয়োগ হয় ম্যাডাগাস্কারে। এই পদ্ধতির সম্ভাবনা নিয়ে পরীক্ষা চলছে চীনে, ইন্দোনেশিয়ায়, কম্বোডিয়ায়, থাইল্যান্ডে, বাংলাদেশে, শ্রীলঙ্কায় ও ভারতে। ২০০৩ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের ২২টি জ়েলায় সার্থক ভাবে এই পদ্ধতির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ ঘটে।
SRI ব্যবস্থায় ধান চাষে তুলনামুলকভাবে কম -একরপ্রতি মাত্র ২ কেজ়ি বীজ লাগে। ফলতঃ এই ব্যবস্থায় প্রতি একক (২৫ x ২৫ সেমি) এলাকায় ধান গাছের ফলন অপেক্ষাকৃত কম হয় যেখানে প্রচলিত রাসায়নিক ধান চাষে প্রতি একরে ২০ কেজি বীজতলা লাগে। (1 acre=apprx 0.4 ha)
বৈশিষ্ট্য | প্রচলিত পদ্ধতি | SRI |
জায়গা | ১৫ x ১০ সেমি | ২৫ x ২৫ সেমি |
ধান গাছের সংখ্যা প্রতি বর্গ এলাকায় | ৬৬ | ১৬ |
উতরাই জমিতে বীজের সংখ্যা | ৩ | ১ |
প্রতি একরে গাছের সংখ্যা | ৭৯২০০০ | ৬৪০০০ |
প্রতি একরে বীজের সংখ্যা | ২০ কেজি | ২ কেজি |
SRI পদ্ধতিতে উতপাদিত ধান সাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশে দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এর মূলের বৃদ্ধি-ও অত্যন্ত বেশী। এই ধরণের গাছ মাটির গভীরতর স্তর থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে।
অঙ্কুরোদ্গমের সাথেই সর্বোচ্চ মাত্রায় কিশলয় বা অঙ্কুর সৃষ্টি ( ৩০টি প্ররোহ/গাছ;৫০টি প্ররোহ প্রতিটি ধানগাছে সহজেই পাওয়া যায়)হয়।যেহেতু তাড়াতাড়ি গাছ রোপণ করা হয় এবং মূল সহজে মারা যায় না তাই উন্নতমানের ব্যবস্থাপনায় এমনকি ১০০টি ফলনশীল প্ররোহ বা তার বেশীও পাওয়া সম্ভব।
ধান
বাবার লাঙলের পিছনে
যেদিন লাঙল চালানো শিখেছিলাম
তিনি বলতেন হাতের মুঠোয়
বোঁটাকে শক্ত করে ধ’রেনে আর
ঘুরোনে গরুকে আয় আয় কর
দেখবি আমার পিছনে ঠিক ঘুরে আসবে
তখন আমার মাথার ওপর বিরাট আকাশ জুড়ে
নক্ষত্রের সারি সারি ফুল ফুটে থাকতো
এখন বাবা নেই
আমার লাঙলের সামনে শুধু জয়ের পথ
যতদূর নজর যায় বিরাট আকাশের
তনুখানি ঠিক যেখানে মাটিতে ঠেকেছে
আমার বাবা কখনও ভাবেননি
আমাকে এম.সি.এ কিংবা আই.টি পড়ানোর কথা
শুধু বলতেন-
ধান আমাদের জান
ধান আমাদের মান
ধান আমাদের ইজ্জত
আর গল্প বলতেন অতীত দিনের
বুলবুলিতে ধান খেয়েনেওয়ার
আসলে চাষ যাদের রক্তে শিহরণ তোলে
এক মুঠো ভাত যাদের পোড়া পেটের স্বপ্ন পূরণ করে
তাদের চোখের তারা-য় ফুটে থাকে
ধান শুধু সোনালী ধান…
মো: মহসীন কবির সরকার
01816624920
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস